October 22, 2024, 5:34 am

ছাপার কাগজের দাম বাড়ায় ফিকে হচ্ছে পত্রিকার ভবিষ্যৎ

ছাপার কাগজের দাম বাড়ায় ফিকে হচ্ছে পত্রিকার ভবিষ্যৎ

বিপ্লবী ডেস্ক ॥ ছাপার কাগজের দাম বাড়তে থাকায় পত্রিকার ভবিষ্যৎ ফিকে হতে শুরু করেছে। কাগজের মূল্য শতকরা ৫০ ভাগ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পত্রিকা ছাপানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সম্প্রতি বেশকিছু পত্রিকা খরচ কুলাতে না পেরে বন্ধও হয়ে গেছে। এক ব্রিটিশ কাগজ ব্যবসায়ী বলছেন, একজন বৃদ্ধ মানুষ যিনি চলার পথ সুগম করেছেন, এটা অনেকটা তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার মতোই বিষয়। ছাপাখানাগুলোতে যে কাগজ ব্যবহৃত হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় সব জায়গায়ই এগুলোর মূল্য বেড়ে গেছে। ঢাকা থেকে সিডনি সর্বত্রই এই মূল্যবৃদ্ধির জোয়ার প্রায় একই রকম। বিজ্ঞাপনগুলো অনলাইনে যাওয়ার আগে যখন পত্রিকার সময় ভালো ছিল তখন ছাপাখানাগুলোর সঙ্গে পত্রিকার সম্পর্ক বেশ জোরালো ছিল। কিন্তু এখন বিজ্ঞাপন তথা প্রচারের বিষয়গুলো অন্যভাবে হচ্ছে। তাই সম্পর্কগুলো লেনদেন নির্ভর হয়ে উঠেছে। তাই পরিস্থিতিও এখন অনেকটাই বদলে গেছে। পত্রিকাগুলোতে পাতা কমে যাওয়ার কারণে কাগজের কারখানাগুলোর অনেক বছর ধরেই বেহাল দশা। সেগুলো হয় ডিজিটাল হয়ে গেছে, নয়তো চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে পত্রিকার কাগজের মূল্যবৃদ্ধির প্রাতিষ্ঠানিক লড়াই অব্যাহত রয়েছে। যেসব ছাপাখানায় মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে সেগুলো অভ্যন্তরীণভাবেও বিপাকে পড়েছে। এরপরও অনেকে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে আনা ছাপাখানার বড় বড় যন্ত্রগুলো বন্ধ করতে দ্বিধায় পড়ে গেছেন। তবে নানা রকম পরিস্থিতির কারণে এই দ্বিধাটাও কমতে শুরু করেছে। কলকারখানাগুলো পত্রিকার ক্ষমতাকে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগাচ্ছে এবং বৈচিত্র্য আনছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নর্স্ক স্কগ নামে নরওয়েভিত্তিক একটি কাগজের ফার্মের কথা। গত জুনে তারা জানিয়েছে যে, নিউজিল্যান্ডে তাসমান মিল নামে তাদের প্রায় ৬৬ বছরের একটি পুরোনো মিল বন্ধ হবে। অনেক কলকারখানা ই-কমার্স সেবার উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন যন্ত্রগুলো মোড়ক তৈরির মেশিনে রূপান্তর করছে। ইউপিএম নামের একটি ফিনিশ প্রতিষ্ঠান এ বছর তুরস্কের একটি কনটেইনার বোর্ড ও মোড়ক তৈরির প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়েলসের শটোন নিউজপ্রিন্ট কারখানা বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। জেসিএস ভলগা নামে রাশিয়ার একটি মিল নিউজপ্রিন্ট কাগজের উৎপাদন শতকরা ৭০ ভাগে নামিয়ে এনেছে। বর্তমানে এর অর্ধেকটা মোড়কীকরণের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। কলকারখানাগুলো পড়ে যাওয়া বাজারে উচ্চ মুল্যগ্রহীতা হয়ে উঠার চেয়ে সহ-অংশীদার হয়ে ওঠার দিকেই ঝুঁকে পড়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিএজ নামে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডভিত্তিক বনায়ন ও কাগজ শিল্পকারখানা সংক্রান্ত গবেষোণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের টিম উডস নামের এক ব্যক্তি। করোনা মহামারির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। মহামারির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া মানুষের আয়-রোজগারও কমে গেছে। এ সময়টায় খুব অল্প সংখ্যক মানুষই পত্রিকা কিনেছে। এটা নিঃসন্দেহে নিউজপ্রিন্ট কাগজের চাহিদাকে হতাশ করেছে এবং একই সঙ্গে কাগজ সরবরাহকারীদের মনঃকষ্ট বাড়িয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকার এক ক্রেতা জানান, গত ২৪ মাসে ইউরোপে ধারণ ক্ষমতার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ নিউজপ্রিন্ট কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আবারও উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। নিউজপ্রিন্টের চাহিদাও কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। এটা অনেকাংশে হ্রাসকৃত ধারণক্ষমতার সঙ্গে মূল্যচাহিদা বৃদ্ধিকে যুক্ত করেছে যার ফলে দামের ওপর প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে মতানৈক্য তৈরি হচ্ছে কারণ কিছু কাগজ সরবরাহকারী টিকে থাকার জন্য অতিরিক্ত মূল্য দাবি করছে। পত্রিকার প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিমাণকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল মনে করে। এশিয়া ও সমুদ্র উপকূলের নিকটস্থ দেশগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় শতকরা ২৫ থেকে ৪৫ ভাগ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কেনিয়ার ন্যাশন মিডিয়া গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ডোরিন ওগোলো নামের এক প্রকিওরমেন্ট ব্যবস্থাপক জানান, বর্তমানে প্রতি টনে প্রায় ৮৪০ ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে যা আগে ছিল টন প্রতি ৬০০ ডলার। উত্তর আমেরিকাতেও এই মূল্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন চুক্তি অর্ধবর্ষের না হয়ে মাসভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। তবে এটা ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে এসে প্রায় শতকরা ২০-৩০ ভাগ বেড়ে গেছে। জার্মানির প্রিন্ট অ্যান্ড মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করেছে যে, মিল কলকারখানাগুলো পত্রিকার সংস্করণে জোরপূর্বক অব্যবহারযোগ্য পাতা ব্যবহার করতে বলছে এবং এতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একে অন্যকে সমস্যায় ফেলছে। এটা অনেকটা বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর বসে যাওয়ার মতো। তবে কলকারখানাগুলো এর পরিবর্তে মোড়কীকরণের কাজও করতে পারে। উত্তর আমেরিকার কারখানার একজন নির্বাহী বলেন, আমরা নিজেদের সুফলের কথা চিন্তা না করে প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচাতে পারি না। কিছু প্রকাশক লাভ একেবারে না রেখেই মূল্য বৃদ্ধি করছেন। বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০২২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাগজের সংখ্যা বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে এমগের ইওয়ান লে মোইন নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। আর এতে বাজারে পত্রিকার চাহিদা কমে যাবে যা পুনরায় এর চাহিদা বৃদ্ধি করে বাজারে ভারসাম্য সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। এন্ডার্স অ্যানালাইসিস নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ডগলাস ম্যাকাবে নামের একজন পত্রিকাগুলোর কাগজের ব্যাপারে বিশেষ করে থামার ব্যাপারে আরো কঠোর হতে হবে বলে জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com