November 22, 2024, 4:02 am
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলার গৌরনদী উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর গ্রেফতার ডাকাতদলের চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, ডাকাতির জন্য চক্রের সদস্যরা কিছু কোড নাম ব্যবহার করতেন। কোডগুলোর মধ্যে একটি ‘অনুষ্ঠান’, আরেকটি ‘কাজ যাওয়া’।
সোমবার (৪ জুলাই) ডাকাত দলের সদস্য গ্রেফতার ও তাদের কোড নাম সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার (পিপিএম)।
তিনি জানান, জেলার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেনের (পিপিএম) নির্দেশে গত ৩ মাস ধরে বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনা তদন্তে কাজ চলছে।
এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (৩ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে গৌরনদী থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করে জেলা ডিবি ও থানা পুলিশ। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, তারা বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে ডাকাতি সংঘটিত করে থাকেন।
অবৈধ এ কাজটিকে তারা কখনোই ‘ডাকাতি’ বলতে চাইতেন না। তাদের ভাষায় এ কাজটি হলো ‘অনুষ্ঠান’। ডাকাতির পরিকল্পনা হলে তারা একে অপরের সঙ্গে ‘অনুষ্ঠানে যাওয়ার’ ব্যাপারে যোগাযোগ করতেন। এবং যখন ডাকাতি করতে বের হতেন, তখন তারা ‘অনুষ্ঠান আছে, কাজে যেতে হবে’ কথাটি উল্লেখ করতেন। কেউ কারও ওপর রাগ করলে ‘কাজ ছেড়ে দে’ উচ্চারণ করতেন।
এর অর্থ হলো ডাকাতি ছেড়ে দেওয়া। কোডগুলো প্রকাশ্যেই তারা বলতেন। কারণ সচরাচর এসব কথা শুনে তাদের ব্যাপারে কারও সন্দেহ করার সুযোগ ছিল না।
ডাকাত সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে তারা ‘অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে’ (ডাকাতির আগে) ঘটনাস্থল রেকি করতেন। এ কাজে মূলে থাকতেন গ্রেফতার মিজান। ডাকাতির সময় ভাড়ায় চালিত যানবাহন (পিকআপ, ট্রাক) ম্যানেজ ও চালনার দায়িত্ব থাকতো বারেক সিকদার ও রফিকুলের ওপর।
গ্রেফতার সেলিম ওরফে কাটার সেলিম লোহার গ্রিল, ঘরের বাইরে থেকে সিঁধ কাটা, তালা কাটার কাজ করতেন। এ দলের অন্যান্য সদস্যরাও ডাকাতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী। ডাকাত দলের এ সদস্যরা যে এক সময় একটি ডাকাতি সংঘটিত করতেন তা নয়।
একই সময় তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতি পরিচালনা করতেন। এ সময় একটি উদাহরণ দেন পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার। তিনি বলেন, মাদারীপুরের একটি ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় ও পুলিশ চলে আসলে ডাকাত সদস্যরা সটকে পড়ে। ওই এলাকা থেকে সরে গিয়ে তারা আরেক জায়গায় গিয়ে ডাকাতি করতেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ৪ সদস্য গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ডাকাত দলটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। গোটা জেলা জুড়ে পুলিশ সদস্যরা এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কারণ, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে এরা আবারও তৎপর হতে পারে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন (পিপিএম) বলেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে গ্রেফতারকৃতরা দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর, ফরিদপুরসহ বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি সংঘটিত করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কাটার সেলিমের বিরুদ্ধে ১২টি এবং মিজানের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।
দলের বাকী সদস্যদের বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, যদিও আমরা এ দলের আরও কিছু সদস্যের নাম-পরিচয় জেনেছি।
আবার কোথায় তাদের ডাকাতির মূল্যবান মালামাল বিক্রি করা হয় সেগুলোর বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে আরও তথ্য পেতে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ডাকাতদলের গ্রেফতার হওয়ার সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগের বাড়িই বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়।
এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। চক্রে নারী সদস্য থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আল বেরুনী বলেন, ডাকাত সদস্যদের কাছ থেকে ছোট প্যান্ট (আন্ডারওয়ার) ও বিশেষ ধরনের ছোট ব্যাগ ও রশি জব্দ করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেছে, তারা এসব প্যান্ট ডাকাতির সময় ভুক্তভোগীদের চোখ-মুখ ঢাকার কাজে ব্যবহৃত হতো। ছোট ব্যাগগুলোয় স্বর্ণসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যাওয়া হতো।
Leave a Reply