November 21, 2024, 9:49 pm

দুই যুগেও কাটেনি বিভাগের পরনির্ভরশীলতা

দুই যুগেও কাটেনি বিভাগের পরনির্ভরশীলতা

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বিভাগীয় শহর হওয়ার প্রায় দুই যুগেও বরিশালের কাটেনি পরনির্ভরশীলতা। বরিশালের সরকারি গুরুপ্তপূর্ন বিষয়ে এখনও ছুটতে হয় পাশ্ববর্তী বিভাগ খুলনাতেই। আর এ যেন খোদ অবহেলা বলে দাবী করছেন সচেতন সমাজ। এই পরনির্ভরশীলতা দূর করে কবে স্বনির্ভরতায় ফিরবে বরিশাল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা যায় ভুক্তভোগীদের মাঝে। তবে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন বিভাগীয় প্রশাসন। সম্প্রতি নগরের বিভিন্ন সরকারী দাপ্তরিক কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করতে গেলে উঠে আসে এসব তথ্য। শ্রম ও পরিবেশ আদালত, বিসিক, জাদুঘর, আঞ্চলিক পোস্ট অফিস, ভূমিসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো খুলনায় ছুটোছুটি করতে হয় বরিশালবাসীকে। বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার ২২ বছরের কাটেনি এ পরিনির্ভরশীলতা। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় কার্যক্রম এখনো খুলনা নির্ভর। ফলে একটু কিছু ওলট-পালট হলেই বরিশালবাসীকে ছুটতে হয় খুলনায়। বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল, সাংস্কৃতিক নেতা নজমুল হোসেন আকাশ, কাজল ঘোষ, সাহিত্যিক অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী, অধ্যাপক ফরিদুল আলম জাহাঙ্গীর তালুকদারের বক্তব্য হচ্ছে, পায়রা ও পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে বরিশালের উপর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। ভাঙা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক চারলেনে উন্নীত হওয়া এবং পাইপ লাইন গ্যাসের সুবিধা পেলেই বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বরিশালে। অনেকেই এখন বরিশালে শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলতে আগ্রহী। এক কথায় পদ্মা সেতুর কারণে বরিশালের বানিজ্যিক দ্বার উম্মুক্ত বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। আর এ কারণে সবার আগে খুলনা নির্ভর প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলোকে গুটিয়ে বরিশাল নির্ভর হতে হবে। তবে এসব কাজে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সাথে জেলার সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট বলে দাবী সুশীল সমাজের অনেকের। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের গাফলতিতো আছেই, সাথে বিভাগীয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারনেই অনেক কাজ আটকে আছে এমন দাবী সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান ও এনায়েত হোসেন শিবলুর। তারা বলেন, নগরীর উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা করার কথা সিটি করপোরেশনের। সে অনুযায়ী খুলনা সিটি করপোরেশন এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বরিশাল সিটি করপোরেশন তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো গুছিয়ে নেবে। এতে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহযোগিতা করবে। এখানে উল্টো জেলা প্রশাসন নগর সাজাতে ভূমিকা রাখছে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, একটি বিভাগীয় শহর কেন আর একটি বিভাগের উপর নির্ভরশীল থাকবে। তাহলে বিভাগীয় প্রশাসন কি করছে? ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ হয়েছে। ২০০০ সালে হয়েছে সিটি করপোরেশন। এতোদিনেও বরিশাল উন্নয়ন কমিটি হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি চান বরিশালের নাগরিকদের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরী হোক বরিশালে। তালুকদার ইউনুসের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও চারবারের কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন ‘প্রশাসনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ তিনি (তালুকদার মো. ইউনুস) নিজেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে পারতেন ও সবাইকে সংগঠিত করতে পারতেন। বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে ভূমিকা রাখার সুযোগ তার চেয়ে বেশি আর কারো নেই বলে দাবী এই বিএনপি নেতার। তিনি বলেন, প্রশাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমাদের নাগরিকদেরই সচেতনতার অভাব রয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয় এখনো খুলনা নির্ভর। গ্যাস লাইন, ফোরলেনে উন্নিত হওয়া এগুলো নিয়ে পদ্মা সেতু হবার আগেই আমরা বলে আসছি। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি।একই কথা বলেছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। তিনি বলেন, শ্রম আদালত, পোস্ট অফিস, বিসিক, বীমা এমনকি জাদুঘরের যাবতীয় কিছু এখনো খুলনা নির্ভর। সিটি করপোরেশন হওয়ার ২২ বছর পরও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নেই এখানে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যা কিছু হয়েছে তার সবটাই বিএনপি শাসনামলে করা। বর্তমান সরকারের ১৩ বছরের অবদান ওই বর্ধিত এলাকার অবহেলিত চিত্র। এসব দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি বলে জানান বিএনপির এই নেতা।এদিকে বরিশালের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার। নগরীর প্রধান সড়ক বর্ধিত করতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সাগরদি ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। রূপাতলি ও নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ফ্লাইওভার তৈরী এবং কীর্তনখোলা নদীর উপর চরকাউয়া এলাকায় আরো একটু সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, বিভাগীয় সমস্যা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। খুলনা নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভোলার গ্যাস ও ফোরলেনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com