October 22, 2024, 5:38 am

পদ্মা সেতুর সুফল; মাছ পঁচে যাওয়ার ভয় নেই পটুয়াখালীর ব্যবসায়ীদের

পদ্মা সেতুর সুফল; মাছ পঁচে যাওয়ার ভয় নেই পটুয়াখালীর ব্যবসায়ীদের

বিপ্লবী ডেস্ক ॥ ‘এতদিন ১২ ঘণ্টা, কোনদিন ২০ ঘণ্টায় মাছ ঢাকায় পৌঁছাতো। একদিকে মাছের বাজার পাওয়া ও মাছ পচে যাওয়ার দুশ্চিন্তা আমাদেরকে ঘিরে রাখতো। এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নেই’- এভাবেই বলেছেন মো. সোহেল নাজির (৪০) নামের এক মাছ ব্যবসায়ী। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর এখন অনেকটাই স্বস্তিতে আছেন বলেই জানিয়েছেন পটুয়াখালীর মহিপুরের এই ব্যবসায়ী। শুধু মহিপুর নয়, স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে কুয়াকাটা, আলিপুরসহ উপকূলীয় অন্য মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এখন তাদের পরিবহন খরচ অনেক কমে গেছে।

সেইসঙ্গে দিনে দিনে মাছের বাজার ধরতে পারছেন তারা। আবার মাছের ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাগরকন্যা কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এতে করে পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের মাঝে বয়ে চলছে অন্যরকম অনুভূতি ও উচ্ছ্বাস। জেগে উঠেছে কুয়াকাটার মানুষের রুটি রোজগারের নতুন সম্ভাবনা। দূর হয়েছে পরিবহন সংকট। সেইসঙ্গে পর্যটকদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের বেলাভূমি কুয়াকাটায় গত কয়েক দশকে আগমন ঘটেছে দেশি বিদেশী অগণিত পর্যটকের। কিন্তু এখানে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় সবসময়ই পর্যটকদের আনাগোনায় কমতি ছিল।

একদিকে ১২/১৩ ঘণ্টার জার্নি, অন্যদিকে লক্করঝক্কর নাজুক পরিবহনের কারণে কুয়াকাটা আসার ইচ্ছা থাকলেও পর্যটকরা অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। যেখানে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসতে সময় লাগতো ১২ ঘণ্টা, সেখানে আজ কুয়াকাটায় পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৬ ঘণ্টা। যোগ হয়েছে গ্রীন লাইন, গ্রীন সেন্ট মার্টিন, প্রচেষ্টাসহ এসি ও নন এসি বিলাস বহুল চেয়ার কোচ ও স্লিপিং কোচ। পুরান গাড়িগুলোও পেল রংয়ের ছোয়া। পর্যটন এলাকায় এখন সর্বত্র সাজসাজ রব। পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সম্পর্ক হয়েছে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মাঝে। ফলে পর্যটকরা খুব সহজেই আসতে পারবে কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। অপরদিকে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় চঞ্চলতা বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

নতুন করে প্লান করছেন তারা। সব ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও। তারা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ অফার করছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক মো. সাইফুল (৩২) বলেন, ‘আমি এই প্রথম কুয়াকাটায় বেড়াতে আসলাম। ১২/১৩ ঘণ্টার জার্নির ধকল আমি সইতে না পারার কারণেই এতদিন আসিনি। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আমিসহ আমার পরিবার মাত্র ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটায় আসলাম। জানতে চাইলে প্রচেষ্টা পরিবহনের কুয়াকাটার ইনচার্জ মো রাসেল খান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হলেই উন্নয়ন ঘটে সকল ক্ষেত্রে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন বাড়ছে।

পাশাপাশি বিলাসবহুল গাড়ি ঢুকতে শুরু করছে। আমরা ইতিমধ্যে এসি, নন এসি সার্ভিস দিয়ে থাকি। পর্যটক ও স্থানীয়রা এখন বিলাস বহুল চেয়ারকোচে চলাফেরা করেন। কনফিডেন্সে ট্যুরিজমের অপারেটর সবুজ মৃধা জানান, ‘আমরা এখন বেশি বেশি করে প্যাকেজ দিচ্ছি। সর্ট ও লং ট্যুরের আয়োজন করে থাকি। পর্যটকরা নানাভাবে হেল্প নিচ্ছে। আগের চাইতে ব্যস্থতা বাড়ছে। আবাসিক হোটেল সৈকতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটকদের আগমন আগের চাইতে বাড়ছে। আমরাও হোটেলকে সাজিয়ে তুলছি।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার জন্যই মূলত পর্যটকদের আগমন ঘটেছে।’ কুয়াকাটা ট্যুরিজম গাইড এসোসিয়েশন সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, ‘পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটাকে আমরাই ব্রান্ডিং করি। গাইডরাই মূলত কুয়াকাটার দর্শণীয় স্পষ্টগুলো দেখাই। আমরা নিজেদের দক্ষ করে তুলতে আরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হচ্ছি।

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা ( টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক কেএম জহির বলেন, ঈদ মৌসুমে ও দীর্ঘ বন্ধ থাকলে কুয়াকাটার হোটেলগুলো পূর্ণ থাকতো। পদ্মা সেতু পাল্টে দেবে প্রেক্ষাপট। নতুন নতুন হোটেল মোটেল গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। চাপ সামলাতে কমিউনিটি ট্যুরিজম গড়ে উঠতে শুরু করেছে। কুয়াকাটার পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হবে। বিনিয়োগ শুরু হচ্ছে। পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা নতুন করে প্রাণ খুঁজে পাচ্ছে। পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে প্রত্যশা পূরণ হলো দক্ষিণ এলাকার। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের এসআই হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলে নিতে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। টহল জোরদার করেছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com