December 11, 2024, 11:43 pm

News Headline :
বরিশালে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় বিপুল শিক্ষার্থী ফেল, বিপাকে শিক্ষকেরা পুলিশের লুট হওয়া দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি,ব্যবহৃত হচ্ছে অপরাধেও পিরোজপুরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান বরিশালে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক ৩ খালেদা জিয়া জনগণের পক্ষে থাকায় নির্যাতিত হয়েছেন: তারেক রহমান ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি টিপু, গ..ণ পি..টু..নির শিকার অনুসারী বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে জুলাই গণহত্যার বিচার করে পিরোজপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক কারবারি বাবা-ছেলে গ্রেপ্তার গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বরিশালে ছাত্রদলের মানববন্ধন বরিশালে ১৪ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি আটক
পুলিশের লুট হওয়া দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি,ব্যবহৃত হচ্ছে অপরাধেও

পুলিশের লুট হওয়া দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি,ব্যবহৃত হচ্ছে অপরাধেও

বিপ্লবি ডেস্ক : জুলাইআগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের লুট হওয়া প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে, অপরাধেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

গত সপ্তাহে মুন্সিগঞ্জে এক তরুণীকে হত্যায় থানা থেকে লুট হওয়া পিস্তল ব্যবহার করা হয়। ছাড়া গত অক্টোবরনভেম্বর মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলিসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ জেলপলাতক আসামি, দাগি সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থী, চরমপন্থী, কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়টি ভয় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানাফাঁড়িসহ পুলিশের নানান স্থাপনা থেকে হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। গোলাবারুদ লুট হয় লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড বিভিন্ন বোরের গুলি।

লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ উদ্ধারে গত সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই অভিযানে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাজার ৩৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৬টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো হাজার ৪১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র লাখ ৬৩ হাজার ১৫৩টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জুলাইআগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালানো ৭০০ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। দুটি বিষয় জনমনে উদ্বেগ নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ উদ্ধার করা না গেলে, জেলপলাতক আসামিদের ধরতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে ৬৬৪টি থানা আছে। আগস্ট ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি, বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটস্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানাপুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব জায়গা থেকে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ লুট হয়। কার্যত আগস্ট দুপুরের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় যেতে সাহস পাননি। একপর্যায়ে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। ১৩ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে থানার কার্যক্রম আবার শুরু হয়।

গত শনিবার সকালে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি এলাকার এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেন থেকে শাহিদা আক্তার (২২) নামের এক তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় শাহিদারপ্রেমিকতৌহিদ শেখ ওরফে তন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, তদন্তে বেরিয়ে আসে, ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে শাহিদাকে গুলি করে হত্যা করেন তৌহিদ। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আল সরকার বলেন, গত আগস্ট ওয়ারী থানা থেকে লুট করার পর পুলিশের পিস্তলটি বাসায় লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন তৌহিদ। প্রেমবিয়েসংক্রান্ত ঝামেলার জেরে তিনি শাহিদাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। তৌহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি এখন কারাগারে। গত অক্টোবরনভেম্বর মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলি একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। এসব ঘটনায় লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলিহত্যাকাণ্ডের পর যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। অভিযানে বেশ কিছু পিস্তল, রিভলবার ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়। উদ্ধার হওয়া পিস্তলরিভলবারগুলো থানায় জমা রাখা সাধারণ মানুষের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র হতে পারে। তবে থানায় কাগজপত্র না পাওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিসেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের শিশুপার্কের পেছনের নালা পরিষ্কার করার সময় এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী একটি শটগান, ছয়টি গুলি একটি গুলির খোসা পান। কুষ্টিয়া মডেল থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে এগুলো নিয়ে যায়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান বলেন, ‘শটগানগুলি কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের। এটি লুট হয়েছিল।
উদ্বেগউৎকণ্ঠা গত সপ্তাহে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জুলাইআগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে হাজার ২০০ আসামি পালান। তাঁদের মধ্যে হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো ৭০০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে জঙ্গি, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত, শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৭০ জন আসামি রয়েছেন। ছাড়া কারাগার থেকে এখন পর্যন্ত আলোচিত ১৭৪ আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীও মুক্তি পেয়েছেন।

জেলপলাতক ৭০০ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা, শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ আলোচিত ১৭৪ আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা উদ্বেগ জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ জেলপলাতক আসামি দাগি সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ার ব্যাপাটি উদ্বেগউৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আকরাম হোসেন বলেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের বেশির ভাগ উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রের খোঁজে বিভিন্নভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানের মুখে দুর্বৃত্তরা অস্ত্র ফেলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সেগুলো পুলিশ উদ্ধার করছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সারা দেশে পুলিশের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কাজ করছে। জেলপলাতক আসামি জামিনে থাকা সন্ত্রাসীদের ওপর পুলিশের নজরদারি আছে। তাঁরা যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারেন, সে জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

পুলিশের লুট হওয়া যেসব আগ্নেয়াস্ত্রগোলাবারুদ এখনো উদ্ধার করা যায়নি, তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লুট হওয়া অস্ত্রগুলো অপরাধীদের কাছে চলে যাওয়ায় জনজীবনে নিরাপত্তার হুমকি দেখা দিয়েছে। এসব অস্ত্র দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর যে অভিযান চলছে, তা আরও জোরদার করতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে এলাকাভিত্তিক তল্লাশি চালাতে হবে। অতীতে যাঁরা সহিসংতা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সন্দেহভাজনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কয়েকটি স্তরে বিভক্ত হয়ে এলাকাভিত্তিক ঘরে ঘরে অভিযান না চালালে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার কঠিন হবে।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম গতকাল বলেন, ঘটনার পর বাংলাদেশের কোস্টগার্ডসহ সরকারি সংস্থাগুলো ভারতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ট্রলার দুটি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নাবিকেরা ভালো আছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com