বিপ্লবী ডেস্ক ॥ বরগুনা শহরে এক ভিন্নধর্মী দর্শনীয় স্থান ‘বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর’। বিলুপ্ত এবং এখনো প্রচলিত শতাধিক রকমের নৌকা বা মডেল রয়েছে এই জাদুঘরে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ করা হয় জাদুঘরটি। বরগুনায় আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে জাদুঘরটি।
বরগুনা জেলা প্রশাসন ভবনসংলগ্ন ৭৮ শতাংশ জমিতে ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের একটি বিরাটাকার নৌকার আদলে নকশা করা জাদুঘরের মূল ভবন। এখানে স্থান পেয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্ত ও প্রচলিত ১০০ ধরনের নৌকা। এখানে রয়েছে নৌকা গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা, থ্রিডি থিয়েটার, খাবারের দোকান ইত্যাদি।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকা।
বাহনটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে একসময় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সড়কের অতি বিস্তারে এবং দখল ও ভরাটে নদী-খাল সংকুচিত হওয়ায় নৌকার সে ভূমিকার মাত্রা কমেছে। কিন্তু গুরুত্ব কমেনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কার্যকরভাবে নৌকা ব্যবহার করেছেন।
যুক্তফ্রন্ট থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এবং এর পরও স্বাধীনতার পক্ষের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নৌকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জাদুঘরে মূলত এ বিষয়টিই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে একসময় বহু ধরনের নৌকা চলত (কিছু এখনো চলে) এলাকা ও নৌপথ ভেদে; যেমন—ডিঙি, একমালাই, কেরায়া, কোষা, পানসি, গয়না, কোন্দা, ঘাসি, সাম্পান, লম্বাপাদি, কাঠামি বা রপ্তানি, বাচারি, পাতাম, সাম্পান, বাইচের নৌকা ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহার অনুযায়ী নির্মাণ করা হতো। সুলভে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এগুলোর।
বিচিত্র আকারের ও গড়নের নৌকা ছিল নৌপথের অতিচেনা চিত্র। লোকসংস্কৃতিতেও নৌকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। মাঝি নৌকার হাল ধরে উদার গলায় জুড়ে দিত ভাটিয়ালী গান।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নৌকাকেন্দ্রিক ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এই জাদুঘরে। এই জাদুঘরে স্থান পাওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্ত হওয়া এবং বর্তমানে ব্যবহৃত নৌকার অনুকৃতিগুলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৌকা সম্পর্কে ধারণা দেবে।
বরগুনা জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলসংলগ্ন পায়রা, বলেশ্বর, বিষখালী ও খাকদোন বিধৌত জেলা বরগুনা। এই জেলার নামকরণের যে একাধিক জনশ্রুতি রয়েছে, তার প্রায় সবই নৌকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলায় রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মৎস্যজীবী, যাদের জীবনের সঙ্গে নৌকা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। বরগুনা নামের উৎপত্তি হয়েছে বরগুন বা নদীর ঢেউয়ের অনুকূল প্রবাহকে নিয়ে। বাওয়ালিরা নৌকা ছাড়ার জন্য অনুকূল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য অপেক্ষা করত খাকদোন নদীর তীরে বিষখালীর মোহনার কাছে। বড়গোন কথাটি থেকেই এলাকার নাম একসময় বরগুনা হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘরের পরিকল্পনাকারী বরগুনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে যুগ্ম সচিব মোস্তাইন বিল্লাহ। জাদুঘরের যাত্রা শুরুর সময়ে তিনি বলেছিলেন, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় বাহারি নৌকাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করানোর পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর নতুন আঙ্গিকে সাজানোর জন্য এর সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply