December 3, 2024, 5:47 pm
নূরুল হাসান সাক্ষর ও মেহেদী হাসান ॥ যত্রতত্র পার্কি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ অটো চালকদের দৌরাত্বে বরিশালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা। বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার সদর রোড ব্যাতীত নগরীর সকল সড়ক জুড়ে বেপরোয়া ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা ও ইজিবাইক। এক সময়ে জনপ্রিয়, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী মনেরমত এই যানবাহন এখন বিলাসিতা নয় বরং মরন হয়ে দাড়িয়েছে নগরবাসীর কাছে। আর এ সকল ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা দ্বারা সৃষ্ট দূর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পাশাপশি সড়কে অহরহ প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
এসব দূর্ঘটনার পিছনে নগরীতে যত্রতত্র পার্কি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অদক্ষ চালকের জন্য হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন সমাজ। যত্রতত্র পার্কি ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক অদক্ষ অটো চালকদের দৌরাত্ম না রুখে দিতে পারলে দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানান নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কর্মীরা। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, আর এই ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার অদক্ষ চালকদের কারনে সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটে ২০১৪-১৫ সালে যাদের অধিকাংশ ভুক্তভোগী এখনও নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন।
২০১৪ সালের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় অটো রিকশার তলায় পিস্ট হয়ে প্রান দিয়েছে অনেকে। এরমধ্যে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) অটো রিকশা দূর্ঘটনায় এক জে এস সি পরীক্ষার্থী নিহত হয়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বৈদ্যপাড়ায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুল ছাত্রী নাদিরা আক্তার (১৪) নগরীর সাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল এবং নগরীর চৌমাথা এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা মিয়ার মেয়ে। ২৩ নভেম্বর রবিবার নগরীর কাউনিয়ায় মারা যায় ৮ মাসের এক শিশু।
ঐদিন বেলা ২ টার দিকে কাউনিয়ার সোনালী আইসক্রীম মোড়ে একটি ব্যাটারি চালিত যাত্রীবাহি অটো রিকশা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে গেলে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু তুষা নগরীর পলাশপুর বৌবাজার এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেনের সন্তান। ২৮ নভেম্বর (শুক্রবার) স্ব-রোডে অটো চাপায় ১৩ বছরের শিশু নিহত হয়। নিহতের নাম বেল্লাল (১৩)।
সে নগরীর চানমারী এলাকার বাসিন্দা মোঃ মোস্তফার ছেলে। এছাড়া ঐ বছর কাশিপুর টিচার্স টেনিং সেন্টার সংলগ্ন ঢাকা বরিশাল মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় যাত্রীবাহী অটোরিক্সা উল্টে ৬ জন আহত হয়। ২৪ নভেম্বর (২০১৪) সোমবার পরিক্ষা দিয়ে মায়ের সাথে বাসায় ফেরার পথে মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী সহ ৫ জন গুরুতর আহত হয়। (২৫নভেম্বর) মঙ্গলবার নগরীর পৃথক স্থানে অটোরিক্সার দুঘটনায় শেবাচিম হাসাপাতালে ৯ জন ভর্তি হয়। পাশাপাশি সিএন্ডবি রোডে অটো উল্টে এসিড পানি পড়ে এনায়েত নামে এক বৃদ্ধার শরীরের একাংশ ঝলসে যায়। কালিজিরা রুটে অটো চাপায় মালেক নামে যুবকের পায়ের আঙ্গুল থেতলে যায়।
পড়ে শেবাচিমের অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি করা হলে তার পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। নগরীর আমতলা মোড় এলাকায় অটোর ধাক্কায় এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়। ঠিক একই ভাবে চলতি সময়ে বাড়তে শুরু করেছে অটো দূর্ঘটনায় নগরবাসীর মৃত্যু। যার প্রধান কারন অদক্ষ চালক। অটো চালক সরোয়ারের সাথে কথা বলে জানাযায়, একসময় তিনি ভ্যানে ঘুরে ঘুরে মহল্লার গলিতে গলিতে কাচামালের ব্যবসা করতো। ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখে ঝুকে পড়েছে অটোরিকশার চালকের পেশায়।
এখন অটোরিকশার ড্রাইভার। মহাজনের কাছে দৈনিক ৫শ টাকা ভাড়া জমা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্তর্য নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ায়। এতে রোজগারও আগের থেকে অনেক বেশী। প্রতিদিন ৬শ থেকে ১ হাজার পর্যন্তর্য আয় হয়। সরোয়ারের ভাষায়,‘আমরাতো ট্রেনিং নিয়া স্টিয়ারিং ধরি না। ২/৪টা এ্যাকসিডিনতো ঘটামু।
অদক্ষ চালকরা কিভাবে সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হয় এমন প্রশ্নের জবাবে অটো শ্রমিক নেতারা জানান অটো মালিকরা তাদের গাড়ি দিয়ে বেশি লাভের আশায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের কাছে ভাড়া দেয়। অপরদিকে বরিশাল প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উল্লেখ্য হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার বন্ধের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ ধরনের গাড়ি আমদানি, ক্রয় ও বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এরপর নানা চড়াই উতরাই পেড়িয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়। চলতি বছরের ১৬ মে নগরীর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বরিশাল জেলা ও মহানগর ব্যাটারি চালিত অটো শ্রমিক কল্যান আয়োজিত বিশাল শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সিটি মেয়র সেরনিয়বাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরের সর্বত্র চলাচলের ব্যবস্থা, অটোর চার্জ দেয়ার সুবিধার্থে চাজিং স্টেশন করাসহ চালকদের প্রশিক্ষণের দেয়ার আশ^াস দেন।
Leave a Reply