November 21, 2024, 10:17 am
- ময়নাতদন্তে আঘাতের চিহ্ন।
- লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, ক্লিনিক মালিক রফিকসহ জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী।
- মামলার প্রস্তুতি, বিএনপির কর্মসূচী।
শামীম আহম্মেদ ॥ বরিশালে দালালের খপ্পরে পরা এক গ্রাম্য রোগীর পক্ষাবলম্বন করে কথা বলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও কর্মচারীর হামলায় বিসিসি ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপি সদস্য গিয়াসউদ্দিন বাবুল মোল্লা নিহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর ১টার দিকে নগরীর জর্ডন রোডের গেইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ঘটনাস্থল এবং হাসপাতাল পরিদর্শন করলেও হামলায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বাবুল মোল্লার ভাই কালাম মোল্লা বলেন, কোরবানির পশু কেনার আলোচনার জন্য তাই ভাই সাবেক কাউন্সিলর বাবুল মোল্লা জর্ডন রোডের ওই ভবনের ৪ তলায় তার ভাড়া ফ্ল্যাটে আসছিলেন। ভবনের সামনে পৌঁছার পর ‘নিউরো সার্জন ডা. অমিতাভ সরকার’ এর নাম নিয়ে এক রোগীর সাথে ডায়াগনস্টিক কর্মচারী ও অটোরিকশা চালকের বাদানুবাদ শুনে সেখানে দাড়িয়ে রোগীর পক্ষাবলম্বন করেন বাবুল মোল্লা। ডা. অমিতাভ সরকার’ জর্ডন রোডে নয়, সদর রোডের চেম্বারে প্রাইভেট প্রাকটিস করেন বলে রোগীকে বলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক ‘হালারে মার, অটো দিয়া চাপা দে’ বলতেই অটোচালক বেশী রোগীর দালাল অটোরিকশা দিয়ে তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ডায়াগনস্টিক মালিকের ছোট ভাই নামধারী এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে তার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করে। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
দ্রুত তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুল মোল্লাকে (৬২) মৃত ঘোষণা করেন। কালাম মোল্লা আরও বলেন, রোগীর সাথে প্রতারণার প্রতিবাদ করায় প্রাণ গেছে তার ভাইয়ের। এ হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করেন তিনি। সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র কেএম শহীদুল্লাহ শহিদ বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বাবুল মোল্লা। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবী জানান তিনি। এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঁঞা বলেন, অপরাধী যত বড় হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্তে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং তার শরীরে পা এবং ঘাড়ে গুরুতর জখমের আলামত মিলেছে। জানা যায়, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ ছাড়াও মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এর আগেও এই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এরকম বহু অভিযোগ পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত ক্লিনিকটির মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ব্যাপারগুলো প্রতিবারই ধামাচাপা পড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, কয়েক বছর আগে একজন রোগীকে জোড়পূর্বক ভূল চিকিৎসা করে হাটুতে ইঞ্জেকশন দেয়ায় রোগীর মাংসপেশি ফুলে গিয়ে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়। ব্যাপারটি জানাজানি হলে তখনকার বেসরকারী চিকিৎসকদের এক নেতার হস্তক্ষেপে ব্যাপারটির মীমাংসা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে বাবুল মোল্লার জানাযা নামাজ শেষে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
এ সময় মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব এ্যাড, মীর জাহিদুল কবির জাহিদ তার বক্তব্যতে বলেন দ্রুত সময়ের মধ্যে তথাকথিত অবৈধ গেইন ডায়েগনষ্টিকের মালিক ও বাবুল মোল্লার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। এ সময় বাবুল মোল্লার প্রতি স্মরন করে আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপি আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, জেলা বিএনপি আহবায়ক এ্যাড, মজিবুর রহমান নান্টু, মহানগর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড আলী হায়দার বাবুল, মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড শাহ্ আমিনুল ইসলাম আমিন ও বাবুল মোল্লার ছেলে।
মহানগর বিএনপির কর্মসুচী ঘোষনা: এ সময় দলীয়ভাবে বাবুল মোল্লার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে শনিবার মানববন্ধন, রবিবার জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি প্রদান করা ও সোমবার দলীয় কার্যালয়ে দোয়া-মোনাজাতের তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। বাবুল মোল্লার জানাজার নামাজে বিএনপি দলীয় নেতা কর্মী অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও নগরীর বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ গ্রহন করে। পরে বাবুল মোল্লার কফিনে মহানগর আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আবায়ক ও সদস্য সচিব দলীয় পতাকা ও শেষবারের মত ফুলেল শ্রদ্ধা জানান মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ। নগরীর কাশিপুর ২৭ নং ওয়ার্ডের রুইয়া নিজ এলাকায় দ্বিতীয় জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
Leave a Reply