November 24, 2024, 3:17 am
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী নগরে পদযাত্রা ॥ যোগ্যতার প্রমাণ দিতে মরিয়া নেতারা
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ চলমান আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই চাঙ্গা হয়ে উঠছে বরিশাল বিএনপি। আর এ লক্ষ্যে তৃণমূলকে সক্রিয় রাখতে দেয়া হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি ও বিভিন্ন কর্মসূচী। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর আহবায়ক হিসেবে মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব হিসেবে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনা দেয়ার পর থেকেই বরিশাল মহানগরী এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে দলটির কর্মী পর্যায় পর্যন্ত। অপরদিকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর পুরনো কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটিতে সাবেক এমপি আবুল হোসেনকে আহবায়ক ও এ্যাড. আবুল কালাম শাহিনকে সদস্য সচিব করা হয় ও চলতি বছরের গত ৬ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সদর উপজেলার পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে এবং ওই কমিটির বিরোধীতা করা পদবঞ্চিত নেতাদের একত্রিত করে নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছেন জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন।
অস্তিত্ব সংকটের যে সম্ভাবনা ছিলো তা উড়িয়ে দিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে নব জোয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছেন বরিশাল বিএনপির নতুন নেতৃত্ব। আর এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ঝিমিয়ে পড়া কিংবা দলছুট হয়ে পড়া নেতা কর্মীরা আস্তে আস্তে জেগে উঠতে শুরু করে। সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে কে কোন নেতার অনুসারী সেই বিষয়টি আপাতত ভুলে গিয়ে আগামীদিনগুলোতে একট্টা হয়ে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন এবং আন্দোলন বেগবান করতে রাজনৈতিক সমাঝোতা অর্থাৎ এককাতারে নিয়ে আসতে বিগতসময়ে ঘোষিত পকেট কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে সকলের সমন্ময়ে গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিভাগীয় গণসমাবেশ ও ইউনিয়ন পদযাত্রায় সকল স্তরের নেতাদের সক্রিয় উপস্থিতি কর্মীদের ভিতরে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এদিকে বরিশাল নগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির বিচক্ষন ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য নির্বাচনে। দলের পোড় খাওয়া পরিক্ষিত নেতা কর্মী ও সাবেক ছাত্র নেতাদের খুজে বের করে যোগ্যতাসহ সার্বিক সব কিছু মূল্যায়ন করে পদ পদবী প্রদান করে কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য সুপারিশসহ প্রেরন করে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নের্তৃবৃন্দ আহবায়ক ও সদস্য সচিবের উপর আস্থা রেখে তাদের প্রেরন করা কমিটিকে অনুমোদন প্রদান করেন।
২০২২ সালের ২২ জানুয়ারী নতুন ৭ জন যুগ্ম আহবায়ক এবং ৩২ জনকে সদস্য করে পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এই ৭ জন যুগ্ম আহবায়ক হলেন আলতাফ মাহামুদ সিকদার, জিয়া উদ্দিন সিকদার জিয়া, কে এম শহিদুল্লাহ, হারুন অর রশিদ, হাবিবুর রহমান টিপু, শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন ও মাকসুদুর রহমান মাকসুদ। যারা প্রত্যেকে নগর বিএনপির এক একটি স্তম্ভ হিসাবে পরিচিত ও বিবেচিত। এ ছাড়া ৩২ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের অনন্য ভূমিকা ও ত্যাগ রয়েছে দলের জন্য। যে কারনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকলেও ঘোষিত এই কমিটি নিয়ে কোন বির্তক বা সমালোচনা হয়নি।
মোট ৪২ সদস্যের শক্তিশালী টিম নিয়ে দল গোছাতে ও দলীয় কর্মকান্ডে আত্ননিয়োগ করতে কাজ শুরু করে আহবায়ক কমিটি। এর পর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি এই কমিটিকে। দলীয় সকল কর্মসূচীতে নেতাকর্মীদের গনজোয়ার, রাজ পথে সবর উপস্থিতি,দলীয় অন্যান্য সকল বিষয়েই সফলতার পরিচয় দেয় তারা। সর্ব শেষ সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসাবে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে সফলতার চূড়ায় পৌছে মহানগর বিএনপি। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে অর্ধ লক্ষাধিক নেতা কর্মীদের সমাগম,সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা করে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রসংশায় ভাসে কমিটির নের্তৃবৃন্দ।
সফলতার পর্ব এখানেই শেষ নয়। প্রায় প্রতিদিনই দলীয় কর্মসূচীর পালন করেও এই অল্প সময়ের মধ্যে মহানগরের ৩০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩ টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছে। চলতি মাসের মধ্যে বাকি ৭ টি ওয়ার্ড কমিটিও গঠন করা হবে জানিয়েছে শীর্ষ নের্তৃবৃন্দ। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে ঘোষিত ২৩ টি কমিটি নিয়ে উল্লেখ করার মত কোন বির্তক, সমালোচনা, বিদ্রোহীতার ঘটনা ঘটেনি। সব মিলিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে একাগ্রতা, দলীয় আনুগত্য, রাজনৈতিক শক্তি সামর্থ্যে বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে শীর্ষে রয়েছে মহানগর বিএনপি। এদিকে একই সময়ে অনুমোদিত বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির কমিটি অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে মেয়াদ পূর্তির আগেই বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র।
সেখানে মহানগরের মত গুরুত্বপূর্ন সংগঠন পরিচালনা করে এই কমিটির কোন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে নগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন রাজনীতি করি দলের জন্য আর নেতা কর্মীদের জন্য। এর বাইরে আর কিছু ভাবি না। দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক চ্যালেঞ্জ, বাধা বিপত্তির মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাদের।
হতাশ হইনি, হাল ছাড়িনি। শক্তিশালী দল গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছি এবং করছি। নগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাদের প্রথম পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত ছিলো দলের পোড় খাওয়া, পরিক্ষিত,দলের জন্য অবদান,ত্যাগ তিতিক্ষার পরও অবহেলিত, সাবেক সফল ও যোগ্য ছাত্র নেতাদের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে নিয়ে আসা। অনেক বাধা বিপত্তির পরও আমরা সেটি করতে সক্ষম হই। সফলতা বা অগ্রযাত্রা যাই বলেন মূল মন্ত্র ছিলো এটি।
কারন আমাদের বিশ্বাস ছিলো দলের এই ক্রান্তি লগ্নে কাদের প্রয়োজন এবং কারা শতভাগ নিবেদিত থাকবে। আমরা খুজে খুজে নিজ উদ্যোগে তাদেরকে ডেকে এনে কমিটিতে পদ পদবী দিয়েছি। আমি মনে করি এ কারনেই নগর বিএনপি এখন পরিপূর্ন ও শতভাগ শক্তিশালী। তিনি আরো বলেন ওয়ার্ড কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্বচ্চতা নিশ্চিতে ও যোগ্যদের মূল্যায়নের জন্য ৩০ টি ওয়ার্ডের জন্য ৭ টি উপ কমিটি করে দেই। যে কমিটি দায়িত্ব প্রাপ্ত ওয়ার্ডে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষন ও তদারকি ও নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে যোগ্যদের তালিকা তৈরী করে সুপারিশ আকারে আমাদের কাছে প্রেরন করে। এর পর আরো যাচাই বাছাই শেষে ওয়ার্ড কমিটি ঘোষনা করা হচ্ছে।
Leave a Reply