November 21, 2024, 6:36 am

মোটরসাইকেলের হলার ও হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে অতিষ্ঠ নগরবাসী

মোটরসাইকেলের হলার ও হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে অতিষ্ঠ নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগরীতে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মোটরবাইক চালকদের মাঝে বেড়েছে উচ্চ শব্দের হলার (একজস্ট/সাইলেন্সার) ব্যবহারের প্রবনতা। নগরীর প্রতিটি স্থান থেকে উচ্চ গতিতে হলার থেকে নির্গত কান ফাটানো শব্দ করে দিনে-রাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এরা। এর সাথে রয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের প্রবনতা। এসব মোটরসাইকেল চালকদের প্রায় সবাই নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। পূর্বে নগরীতে এমন মোডিফাইড বাইকের সংখ্যা হাতেগোনা থাকলেও এখন সেই সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা দামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইকগুলোকে মোডিফাই করে পরিনত করা হচ্ছে এমন অস্বস্তিকর যানবাহনে। যার বে-পরোয়া চলাচলে সৃষ্ট উচ্চ শব্দে এক রকম অতিষ্ঠ নগরীর পথচারি সহ অন্যান্য যান চালকরা। শুধুমাত্র নিজেকে অন্যের থেকে আলাদা আর শুধুমাত্র শখের বশে দামি মোটরবাইকটির ক্ষতি করে এমন উচ্চ শব্দের বাইকে রুপান্তর করার কথা স্বীকার করেছে একাধিক কিশোর। এজন্য তারা মোটা অংকের টাকাও খরচ করছে। অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবে শব্দ দূষনের ভয়ঙ্কর মাত্রায় থাকা নগরীতে এই বাইকগুলো এখন চরম বিরক্তির যানবাহন, যা বাড়াচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের সকল বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী এটি দন্ডনীয় অপরাধ। তাই এদের নিয়ন্ত্রনে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি সচেতন মহলের। বরিশালের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে এমন বাইকগুলো। শুক্রবার নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকা থেকে ইয়ামাহা এমটি ব্র্যান্ডের একটি মোটরবাইকে হলার লাগিয়ে যেতে দেখা যায় এক কিশোরকে। সে নিজেকে নগরীর একটি কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানায়। সিয়াম নামের ওই কিশোর বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করায় তাকে পরিবার থেকে বাইকটি দেয়া হয়েছে। নিজের বাইকটিকে স্বতন্ত্র বানাতে মূলত হলারটি লাগিয়েছে ৮ হাজার টাকা খরচ করে। ঢাকায় তার বন্ধুদের দেখে এই মডিফাই করেছে। এমন হলারের মূল্য ৫০ হাজার টাকার ওপরেও রয়েছে। বর্তমানে এটি স্টাইল ও ট্রেন্ড বলে জানায় সিয়াম। নগরীর প্রায় সব মোটর মেকানিক এই মোডিফাই করতে পারে। সে হলার লাগিয়েছে তবে অনেকেই উচ্চ শব্দের মোডিফিকেশনের জন্য নিজেদের বাইকের সাইলেন্সার পাইপটি কেটেও ফেলে। সিয়াম জানায়, সে যখন বাইক নিয়ে যায় অনেক সময় পথচারীরা গালাগাল করে। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। শুধু ট্রাফিক পুলিশের চোখ এড়িয়ে চলতে হয়। ভাটারখাল এলাকার মোটর সাইকেল মেকানিক জসিম জানান, আগে খুঁজেও এমন মোটরসাইকেল দেখা যেত না। এখন হলার লাগানোসহ নানা উপায়ে বাইকের শব্দ বাড়ানোর স্টাইল শুরু হয়েছে। গত ২ বছরে নগরীতে এমন বাইকের সংখ্যা লক্ষণীয় পর্যায়ে বেড়েছে। কেউ টাকা খরচ করে এটি করে, কেউ আবার বিনে পয়সায় কেটে ফেলে নিজের দামি বাইকের সাইলেন্সরটি। এতে বাইক চালালে স্বাভাবিক শব্দই বের হয় বিকট আকারে। টাকার হোক বা বিনে পয়সা, দুই ক্ষেত্রেই এমন মডিফিকেশনে বাইকের ক্ষতি হয় বলে জানান তিনি। এতে তেল খরচ বাড়ে, দীর্ঘদিন এমন অবস্থায় চলা বাইকের ইঞ্জিনে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এখন যার বাইক সে যদি ক্ষতির পরেও এমন মডিফাই করে তবে সে ক্ষেত্রে বলার কিছুই নেই। বিকট শব্দে বিরক্ত আফরোজা আক্তার নামের এক নারী পথচারী বলেন, দিনে-রাতে যে কোন সময় এমন বিকট শব্দের বাইকগুলো চলাচল করে। হাসপাতাল রোডে  একটি ভবনের ৪ তলায় বসবাস করেন তিনি। রয়েছে ২ বছরের এক সন্তান। প্রায়ই সড়ক দিয়ে বিকট শব্দে যায় এই বাইকগুলো। ৪ তলা বাসায় থেকেও হলারের শব্দে আতকে উঠতে হয়। প্রতিদিন একাধিকবার ভয় পায় তার সন্তান। ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক আব্দুস সোবাহান বলেন, সারাদিন চারপাশ দিয়ে বে-পরোয়াভাবে এমন অনেক মোটরসাইকেল যায়। অনেক সময় এত জোরে শব্দ হয় যে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করে। এদের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে মন্বব্য করেন তিনি। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, হাসপাতাল সরকার ঘোষিত নীরব এলাকা হলেও সড়কে উচ্চ শব্দে গাড়ি চলাচল করে সব সময়ই। গাড়ির হর্ন অতিষ্ঠ করে তোলে। এরমধ্যে আবার এই মোটবাইকগুলো করে বাড়তি সমস্যা। কেউই নির্দেশনা মেনে চলে না। যে কারণে আমাদের দায়িত্ব পালনেও সমস্যা হয়। তিনি বলেন, দূষিত শব্দের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকলে মানুষের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অপ্রস্তুত অবস্থায় খুব কাছাকাছি এমন শব্দে কানের তালা ফাটতে পারে। এছাড়া দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এটি বড় ধরনের ঝুঁকির কারন হতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র ক্যামিস্ট গোলাম কিবরিয়া বলেন, এমনিতেই বরিশাল নগরীর সবগুলো স্থানে অতিরিক্ত মাত্রায় শব্দ। গাড়িগুলোতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহৃত হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ খুবই খারাপ আমাদের মস্তিষ্কের জন্য। শব্দ দূষণ মানবদেহে ধীরে ধীরে শ্রবণ, মস্তিষ্ক, দৃষ্টিশক্তিসহ আরও অনেক ক্ষতি করছে। দূষণ রোধে প্রতিমাসে পরিবেশ অধিদপ্তর মোবাইল কোর্ট চালায়। কিন্তু তাতেও নিয়ন্ত্রণ হয় না। বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের দায়ীত্বশীল সূত্র জানায়, সড়কে সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ট্রাফিক বিভাগ সর্বদা সচেতন রয়েছে। এই ধরনের বাইকের হলার, উচ্চ শব্দের হর্ন লাগানো বেশ গুরুতর একটি অপরাধ। ধরা পড়লেই এদের জরিমানা করা হয়। এমন বাইকারদের নিয়ন্ত্রনে আনতে আরও কঠোর হবে ট্রাফিক বিভাগ। এ সংক্রান্ত নির্ধারিত আইনের ধারা-৮৮ মোতাবেক  নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত উচ্চমাত্রার কোনরূপ শব্দ সৃষ্টি বা হর্ন বাজানো বা কোন যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানের স্থাপন সংক্রান্ত ৪৫ এর বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা সহ অনধিক ১ বছর দন্ড দেয়া যেতে পারে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com