November 23, 2024, 8:18 am
চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥ চরফ্যাশন উপজেলার হতদরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ‘নগদ’ একাউন্টে আসা সরকারি ভাতার লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যাক্ত ও শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা ভাতাভোগীদের একাউন্টে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে সুকৌশলে এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। সমাজসেবা অফিসের তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় বয়স্কভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৬৯২ জন। বিধবাভাতা পাচ্ছে ৬ হাজার ৩৩১ জন। এদের মধ্যে অসংখ্য ভুক্তভোগীকে প্রতিনিয়ত উপজেলা সমাজসেবা অফিস কক্ষে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও টাকা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসতে দেখা যায়। অসহায় ভাতাভোগীর অনেকেই শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন দিশেহারা। অফিসে একাধিকবার অভিযোগ করেও সুরাহা মিলছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ ও সমাজ সেবা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে এমন প্রতারণা। তারা বলেন, কর্মকর্তারা জরিত না থাকলে আমাদের নাম ঠিকানা ও ভাতা দেওয়ার সঠিক সময় প্রতারক চক্র কিভাবে জানে। প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভাতাভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাতা দেওয়ার সময় সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও নগদ অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করে বলেন, আপনার ভাতার টাকা অ্যকাউন্টে পাঠানো হবে। দয়া করে আপনার মোবাইলে প্রেরিত কোড (ওটিপি) নম্বরটি বলেন। নাম্বার বলার সঙ্গে সঙ্গে তার নগদ অ্যাকাউন্টে আসা টাকা উধাও। অপরদিকে উপজেলার নাংলাপাতা গ্রামের ভুক্তভোগী সেতারা বেগম, আবদুল কাদের, পশ্চিম এওয়াজপুর গ্রামের হনুফা বেগম ও চর কলমি ইউনিয়নের নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, দুইবার আমাদের মোবাইলে নগদ একাউন্টের মাধ্যমে ভাতা পেয়েছি এখন আর পাইনা। অফিসে গিয়ে অভিযোগ করলে তারা কম্পিউটার দেখে বলেন, আপনাদের সবকিছু ঠিক আছে টাকাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু মোবাইল নাম্বার মিলিয়ে দেখা যায় আমাদের নগদ একাউন্ট করা মোবাইল নাম্বারের সাথে মিলছে না। আমাদের নাম্বার পরিবর্তন করে অন্য মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে। এতে করে টাকা চলে যাচ্ছে সে নাম্বারে। নাম ঠিকানা সবকিছুই সঠিক শুধু মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনো অনেক ভাতাভোগী বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা ঠিক মতো টাকা পেয়েছি। কিন্তু নগদ একাউন্টে টাকা আসার নিয়ম করার পর থেকে আর টাকা পাচ্ছি না। পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মঞ্জু বলেন, অনেক কষ্ট করে আমার ওয়ার্ডের অসহায় পঙ্গু আ. গফুর ও মো. কামালকে সরকারি ভাতার আওতায় এনিছি। এবার তাদের ভাতা নগর একাউন্টে আসার সাথে সাথে প্রতারণার মাধ্যমে সব টাকা নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসে অভিযোগ ও থানায় জিডি করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে প্রতারক চক্র। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মামুন হোসেন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ভাতা দিতে গিয়ে কিছু অনিয়ম হয়েছে। আমরা ১৯১টি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা উদঘাটনের পর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান করা হবে। পাশাপাশি সার্ভার জটিলতার কারণে ১২ জনের ভাতা প্রদান স্থগিত আছে। কোনো প্রতারক ফোন করে নগদ একাউন্টের পাসওয়ার্ড বা কোড চাইলে ভাতাভোগীদের না দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply