November 21, 2024, 5:46 pm
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) হওয়ার আগেও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতো নগরীর ১২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি ওয়ার্ড। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার ২০ বছর পরও একই অবস্থা। এই সময়ের মধ্যে চার জন মেয়র দায়িত্ব পালন করলেও তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি। দায়িত্বে ছিলেন একাধিক সংসদ সদস্যও। কিন্তু যেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ছিলাম সেই পানিতেই তলিয়ে রয়েছি। বছরের পর বছর এ অবস্থা চলতে থাকায় এখন আর কারও কাছে অভিযোগ করি না।’ আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল নগরীর জিয়া নগরের আব্বাস হাওলাদার। তিনি আরও বলেন, ‘গত চার দিন ধরে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ফুটের বেশি উচ্চতায় পানি থাকে। দুইটি ওয়ার্ডের তিন কিলোমিটারের এলাকাবাসী এ পানিতে জিম্মি। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধিকে দেখলাম না খবর নিতে। পানিতে প্লাবিত থাকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খ্রিস্টান পাড়া ও ত্রিশ গোডাউন এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরআইচা খেয়াঘাট, জিয়ানগর, পূর্ব রূপাতলী ও পাকারমাথা। খ্রিস্টান পাড়ার মাইকেল জন বলেন, ‘এ পানি প্রতি বছর উঠছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যায়। এখন কীর্তনখোলা নদীর পানির বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার নিচু এলাকা প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ওই সময় ঘর থেকে বের হতে হলে তিন ফুট পানিতে পা চুবাতে হয়। এরপর গন্তব্যে গিয়ে আবার পানি পেরিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে হয়। তবে এ সময় সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে আমাদের ছেলেমেয়েরা। তারা কোনভাবেই ঘর থেকে বের হতে পারে না। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় এমপি, মেয়র এবং কাউন্সিলরকে জানালেও আশ্বাসে ঘুরপাক খাচ্ছে সমাধান। এখন আমাদেরও সহ্য হয়ে গেছে। এ কারণে কারও কাছে কিছু বলি না।’ ধান গবেষণা এলাকার ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘কীর্তনখোলা পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে এ সমস্যা বড় আকার ধারণ করে। তবে প্রতি বছর বর্ষাকালের স্বাভাবিক দিনগুলোতেও পানিতে প্লাবিত হয় ধান গবেষণা এলাকার সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি। পানি সরানোর জন্য ড্রেন নেই। ড্রেন থাকলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।’ ওই দুই ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রয়েল ও ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে সড়ক উঁচু করে ড্রেন নির্মাণ করে সাগরদী খালের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এতে করে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠলেও ওই সব এলাকায় পানি প্রবেশ করবে না। অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সদর আসনের এমপি কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীম এমপি ও মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘শপথ গ্রহণের পর বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করে সমস্যা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা নগরীর বেশ কিছু এলাকায় রয়েছে। স্থানীয় এমপিকে সঙ্গে নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। আমি শুধু আশ্বাস দিই না, দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরবাসী তা বুঝতে পারবে। যে ওয়াদা করেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে নজির স্থাপন করবো। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদ ফারুক বলেন, ‘কী কারণে নগরীতে কাজ করতে পারিনি তা গণমাধ্যম কর্মীরা জানেন। তবে এখন নবনির্বাচিত মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর ভাঙা সড়ক সংস্কার থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা এবং কীর্তনখোলার পানি থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় বড় ধরনের কাজ করা হবে। এ জন্য শিগগির সাতটি খাল খনন করা হবে। এরপর কীর্তনখোলা নদীর পানি যাতে নগরীতে প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য খালের মুখে স্লুইস গেট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি করতে পারলে আর জলবদ্ধতা থাকবে না।
Leave a Reply