August 20, 2025, 6:27 pm

‘পদ্মা নদীর মাঝি’ আছে, ইলিশ নেই বাঙ্গালীর স্বাদে

‘পদ্মা নদীর মাঝি’ আছে, ইলিশ নেই বাঙ্গালীর স্বাদে

কমল সেনগুপ্ত
‘জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস ইলিশ মাছের ভরা মৌসুম। নদীতে জাল ফেললেও ইলিশ মাছের দেখা মিলছে না। তাই আমদানি কম। ইলিশের দাম কমবে বলে মনে হয় না’। ইলিশের দাম কমবে কবে জানতে চাইলে গতকাল শহরের পোর্ট রোডের খুচরা বাজারের এক মাছ ব্যবসায়ী আক্ষেপের সাথে এ কথা বলে। ইলিশ মাছের নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন বাঙালি হাতে গোনা! সর্ষে ইলিশ, ভাপা, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ইলিশের টক, ইলিশের ডিম ভাজা আর তেল- আর কত কী যে বাঙালি ইলিশ দিয়ে রাঁধতে পারে, তার তালিকা শেষ হওয়ার নয়। বাঙালির ইলিশ প্রেম আছে। আমরা ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছি ইলিশকে। ইলিশও নিজের পুষ্টিগুণে আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করে। পাতে ইলিশ পড়লে স্বাদরক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যরক্ষাও হয়। কিন্তু ভরা মৌসুমেও বরিশালের বাজারে ইলিশের দেখা মিলছে না। বরিশালের মাছের আড়ৎ পোর্ট রোড বাজারে ইলিশের সরবরাহ অল্প কিছু দেখা গেলেও দাম নাগালের বাইরে। গতকাল বাজারে গিয়ে ইলিশের চড়া দাম নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। তারা জানান, ‘ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। শখ করেও একটি মাছ কেনার মতো সামর্থ্য নেই অনেকের’।

ঘোর বর্ষার মৌসুম। বেলা গড়ালেই আকাশ কালো করে নামছে ইলশে গুঁড়ি। কিন্তু এই রোদ-বৃষ্টির খেলা সত্ত্বেও, বঙ্গোপসাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশের ঝাঁক। ফলে বেশিরভাগ বাঙালির রান্নাঘরেই এই বর্ষায় ইলিশের গন্ধ নেই। বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ১শ থেকে ২শ গ্রামের ইলিশের বাচ্চাও বিক্রি হচ্ছে ৬ শত ৫০ থেকে ৭ শত টাকায়। বরিশালের খুচরা বাজারগুলোর চিত্রই এটাই। শহরের কালীবাড়ী রোডের বাসিন্দা কবির। বাজারে এসেছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন প্রায় পঁচিশ বছর ধরে বাজার করি। ৭-৮ বছর ধরেই ইলিশের আকাল চলছে। এবছর ইলিশের বাজার সংকটময় হয়ে উঠেছে। আগে মৌসুমে খুচরা বিক্রেতারা ইলিশ নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরত। এখন ইলিশ কিনতে হলে পকেট ভারী থাকতে হয়, আবার বাজারে ইলিশ তেমন একটা দেখাও যায় না। বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, অসংখ্য নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসতে পারে না। তিনি আশংকা করে বলেন ভাদ্রের মাঝামাঝি যোগান কিছুটা বাড়লেও ইলিশ নিন্ম মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্তের কাছে ‘সস্তা’ হবার সম্ভবনা কম। বাজার ঘুরে বুঝলাম এবার ইলিশ কিনতে হৃদয় পুড়ছে বাঙালীর।

ছোট ছোট আঁশের রূপালিরঙা ইলিশের খ্যাতি তার রূপ আর স্বাদেই। এই মাছের গন্ধ এবং স্বাদ এতটাই যে, তা দিয়ে কালে কালে তৈরি হয়েছে নানা পদ। এই রুপালি শষ্যের রূপের বর্ণনা এসেছে বাংলা কবিতায়, গল্পে-উপন্যাসে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের শুরুতে লিখেছেন, ‘বর্ষার মাঝমাঝি … শেষরাত্রে ভাঙা-ভাঙা মেঘে ঢাকা আকাশে ক্ষীণ চাঁদটি উঠে। জেলে-নৌকার আলোগুলি তখনও নেভে না। নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ। লণ্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে, মাছের নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ মণির মত দেখায়’। বর্ষার মাঝমাঝি পদ্মা নদীর মাঝি আজও নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যায়। ঘোরে একুল থেকে ওকুল। কিন্তু নৌকার খোল ভরে না মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্ণনের সেই রুপালি ইলিশে। সামান্য যা ওঠে তার চোখগুলো ধুসর। শুধু দেখেই জিভের জল গিলতে হয় বাঙ্গালীর। ঝোলে- ঝালে-অম্বলে ইলিশ এখন আর ওঠে না সাধারণ মানুষের পাতে। জেলের মুখও ভরে না আনন্দের হাসিতে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com