October 22, 2024, 9:27 am

কর্মবীর এনায়েত হোসাইন মিলনের প্রয়ান দিবস আজ

কর্মবীর এনায়েত হোসাইন মিলনের প্রয়ান দিবস আজ

দেশ স্বাধীনের পর বরিশাল থেকে বিপ্লবী বাংলাদেশের প্রকাশনার কাজ শুরু হওয়ার পর পত্রিকা প্রকাশের কাজের ফাকে বিপ্লবী বাংলাদেশ এর বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হলের অফিসে সেই সময়কার একঝাঁক তরুন সাংবাদিক। ছবিতে: বাম থেকে এনায়েত হোসেন মিলন, গোবিন্দ বাবু, নজরুল ইসলাম চুন্নু ও মাইনুল হাসান।

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ এনায়েত হোসাঈন মিলন, সাপ্তাহিক কিংবা দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশের যিনি ছিলেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাধীনতার পর থেকে যখন বিপ্লবী বাংলাদেশ বরিশাল শহরের সদর রোড (টাউন হল) অফিস থেকে প্রকাশনা শুরু করে, তখন থেকেই সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদের সাথে এনায়েত হোসাঈন মিলন যুক্ত হন বিপ্লবী বাংলাদেশের সাথে। আমৃত্যু তিনি বিপ্লবী বাংলাদেশের অলংকরণের দেখভাল করতেন। স্বাধীনতার পর বিপ্লবী বাংলাদেশ বরিশাল থেকে প্রকাশনা শুরু করার পর বরিশালের তখনকার তরুন সাংবাদিকরা যুক্ত ছিলো বিপ্লবী বাংলাদেশের সাথে। প্রয়াত মিন্টু বসু, প্রয়াত মাইনুল হাসান, এস.এম. ইকবাল, নজরুল ইসলাম চুন্নুর মতো সাংবাদিকদের সাথে এনায়েত হোসাইন মিলনও ছিলেন নূরুল আলম ফরিদ সম্পাদিত বরিশালের প্রাচীন স্থানীয় দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশের সাথে।

একাত্তরে রনাঙ্গণের পত্রিকা দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন সাংবাদিকদের একজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সদস্য, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিশু সংগঠক, চিত্রশিল্পী, নাট্যাঙ্গনের নিভৃতচারী কর্মবীর এনায়েত হোসাইন মিলন। আজ ২৭ জুলাই তার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে তিনি সবাইকে কাদিয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। তিনি ১৯৪৫ সালের ২১শে জানুয়ারি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার খোলনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং হস্তিশুন্ড হাইস্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মা জুলেখা বেগম, স্ত্রী শেফালী বেগম। একমাত্র ছেলে আবির হোসেন এইচ আর কনসাল্ট্যান্টেসি ফার্মের এইচ আর এনালিস্ট, একমাত্র মেয়ে তানিয়া নিম্মির পরিবার ওয়াশিংটনে থাকে।

তিনি ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ব্রজমোহন কলেজ থেকে বি এস সি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি শিল্পের প্রতি অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। আঁকা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। বেহালা ও বাশী বাজাতেন। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে চারুকলা প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশনা শিল্পে কাঠ খোদাইয়ের কাজে (কাঠের ব্লক) তিনি ছিলেন অনন্য। ১৯৬৫ সালে তিনি বরিশাল যুব সংঘ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেন। সাংগঠনিক দিক ছাড়াও তিনি যুব সংঘের নাটকগুলোতে লাইট সেটসহ বিভিন্ন কারিগরি বিষয় দেখতেন। ৬৯ এ বরিশালে খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হলে এর সদস্য না হলেও তিনি খেয়ালীর নাটকগুলোতে মেকআপ, মঞ্চসজ্জা ও আলোক ব্যাবস্থাপনার কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি শব্দাবলীতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে শব্দাবলীর সবগুলো নাটক ও অনুষ্ঠানের কারিগরি ও নান্দনিক বিষয়ে কাজ করেছেন। ১৯৮১ থেকে তিনি টানা ৯ বছর শব্দাবলীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শব্দাবলীর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুরুতে তিনি বরিশাল চারুকলা বিদ্যালয়ের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি প্রান্তিক সংগীত বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ দেখাশোনাসহ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। একজন শিশু সংগঠক হিসেবে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পত্রিকা সাপ্তাহিক বিপ্লবী বাংলাদেশের শিশু পাতা ছিল সূর্যসাথী, যা সাংগঠনিক রুপ পেয়েছিল। এনায়েত হোসাইন মিলন ছিলেন সূর্যসাথীর পরিচালক। এছাড়া চঁদেরহাটের শিশুদের গড়ে তুলতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি শরিয়তপুর রুদ্রকর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল টাউন স্কুল এবং সবশেষে সরকারি বরিশাল কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক হিসেবে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বরিশাল কলেজে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনায় তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় বরিশাল যুব সংঘের কর্মী হিসেবে বরিশাল ধর্মরক্ষিণী সভাগৃহে যেকজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাজি রেখে দেশীয় অস্ত্র তৈরী করেছেন তার মধ্যে এনায়েত হোসাইন মিলন অন্যতম। সাংবাদিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। “বাংলাদেশ ” পত্রিকার তিনি ছিলেন প্রকাশক। স্বাধীনতার পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পত্রিকা নূরুল আলম ফরিদ সম্পাদিত “বিপ্লবী বাংলাদেশ ” এর সাথে যুক্ত হন।

মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ এর সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা থেকে প্রকাশিত “মর্নিং পোস্ট ” পত্রিকার তিনি বরিশাল প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। বরিশাল প্রেস ক্লাব কার্যনির্বাহী পরিষদে বিভিন্ন সময় তিনি কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৫ সালে বরিশাল চারুকলা বিদ্যালয়, ২০০৩ সালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের বিভাগীয় সম্মেলনে সম্মাননা প্রদান করে। বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ তাকে গিয়াস স্মৃতি পদক প্রদান করে। শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটার তাঁর প্রতি সম্মান স্বরূপ গিয়াস-মিলন স্মৃতি পদকের প্রচলন করেছে। অমায়িক ব্যবহার, বিনয় ও মুক্ত চিন্তার উদাহরণ এনায়েত হোসাইন মিলন ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com