November 25, 2024, 3:10 pm
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালে চলছে সাহিত্য বাজার পত্রিকার ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎসব প্রস্তুতি। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দিনব্যাপী এই উৎসবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার ছাড়াও ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ ও বরিশালের সাহিত্য সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। বরিশাল সাহিত্য সংসদের প্রধান উপদেষ্টা সাহিত্যিক অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অতিথি প্রায় সবাইকেই চিঠি, ফোন ম্যাসেজ ও হোয়াটসআ্যাপে যোগাযোগ করা হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সরাসরি ফোনে আশ্বাসও দিয়েছেন। আমাদের জেলা প্রশাসক থেকে এখনো কোনো উত্তর আসেনি। তবে তিনি তো সবসময় এসব কাজের সাথেই থাকেন বলে জানান তপংকর চক্রবর্তী। এদিকে বরিশাল সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ জানিয়েছেন, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর সাথেও যোগাযোগ হয়েছে। তিনি আগস্ট শেষে এ বিষয়ে মতামত জানানোর কথা বলা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান খুবই পজিটিভ। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় আছে। কেউ এই অনুষ্ঠানের খরচ বহন করতে স্পন্সর করলে হয়তো বড় উৎসব করতে পারবে বরিশাল সাহিত্য সংসদ। বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে ২০০৭ সালের আগস্টে যাত্রা শুরু করে সাহিত্য বাজার পত্রিকা। জেলায় জেলায় সাহিত্য বিভাগে “ময়মনসিংহ সাহিত্য” নিয়ে প্রথম সংখ্যাটি বেশ আলোচিত হয়। এরপর নিয়মিত সাতটি বিভাগের উপর সাতটি সংখ্যা রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে সাহিত্য বাজারকে। ভারত, নেপাল ও আমেরিকা থেকেও লেখা আসতে শুরু করে। ২০১২ সালে সাহিত্য বাজার পত্রিকাটি প্রথম পাঁচ বছর পূর্তি উৎসব করে। ঢাকার কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে পাঁচ দিনের বইমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সারা যাকের, কাজী আরিফ, মামুনুর রশীদ প্রমূখ। পাঁচদিন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উল্লেখযোগ্য প্রায় সবাই। ওই সময় হঠাৎ ঝড়ের ভিতর পাবলিক লাইব্রেরীর এই উম্মুক্ত আয়োজনে কবি মোহাম্মদ সামাদ, আসলাম সানি, আবৃত্তি শিল্পী শাহাদাত হোসেন নিপু ভিজে ভিজেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। যা আজ হয়তো মজার স্মৃতি। ২০১৪ সালে পত্রিকার সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনদিনের উৎসব আয়োজন করে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ নেতৃবৃন্দ ও কবি সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী। কবি নির্মলেন্দু গুণ ও নাসরীন জাহানের একদিনের স্থানে তিনদিনই থেকে যাওয়া বলে দেয় ওই আয়োজন কতটা প্রাণবন্ত ছিলো। সাহিত্য বাজার পত্রিকার এটাই ভিন্নতা যে, তার উৎসব আয়োজনে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সেটির উপর মুক্ত আলোচনা সবসময় ছিলো। ময়মনসিংহের উৎসবেও তিনদিন তিনটি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। যেখানে আলোচনায় অংশ নেন ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঢাকা, যশোর, চট্টগ্রাম থেকে আগত অতিথিবৃন্দ। ছিলেন সাংস্কৃতিক সচিব নিজেও। এরপর থেকে অর্থ সংকটে অনিয়মিত হয়ে যায় পত্রিকাটি। রেজিষ্ট্রেশন দিয়েও টাকা জমা দিতে না পরায় তা বাতিল হয়ে যায়। টিকে থাকে অনলাইন সাহিত্য বাজার ডটকম। ২০১৬ সালে পত্রিকার দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব আয়োজন করে বরিশালের সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ। সৈয়দ দুলাল, অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী, কাজল ঘোষ, পার্থ সারথি, সুশান্ত ঘোষ, বাসুদেব ঘোষ, অপূর্ব গৌতম প্রমূখদের আন্তরিকতায় এবং কবি আসাদ চৌধুরী ও নাট্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত এই উৎসব সফল হলেও পত্রিকাটির মৃত্যু ঘটে উৎসব সংখ্যা প্রকাশের পরপরই। বলা যায়, ২০১৪ সালের পর নিয়মিত থেকে অনিয়মিত হয়েছে সাহিত্য বাজার পত্রিকাটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে মোট প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা ৩১টি। ২০১২ সালের আগস্ট থেকে সাহিত্য বাজার ডটকম নিয়মিত অনলাইন হিসেবে আজ পর্যন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে সাহিত্য নির্ভর না হয়ে সেটিও এখন বহুমুখী বাজার নির্ভর হয়েছে। আগস্ট মাস। জাতীয় শোকদিবস। তাই আগস্টের পরিবর্তে সেপ্টেম্বরে সাহিত্য বাজার পত্রিকার অনলাইন মিডিয়া সাহিত্য বাজার ডটকম এর ১০ বছর পূর্তি একইসাথে সাহিত্য বাজার পত্রিকার ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবো আমরা।চেষ্টা করবো আবার নিয়মিত হতে। তাই সাহিত্য বাজার পত্রিকার ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর উদ্যোগে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বরিশালের আব্দুর রব সেরনিয়াবাত প্রেসক্লাবে দিনব্যাপী এই আয়োজন সাজানো হচ্ছে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও বরিশালের সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর। এরপর প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার মিলনায়তনে থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন। বিকাল চারটায় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। “পদ্মা সেতুর সুফলঃ উন্নয়নের বরিশাল “- শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান এবং অধ্যাপক ও সাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী। মুক্ত আলোচনা ও নাগরিক মতবিনিময়ে অংশ নেবেন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি প্রতিনিধিগণ। এতে বিশেষ বিশ্লেষক হিসেবে উপস্থিত থাকার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুক শামীম, বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার ও সিটি করপোরেশনের সিইও ফারুক আহমেদ। অতিথিবৃন্দ নিমন্ত্রণ পত্র পেয়েছেন। তবে এখনো যথেষ্ট সময় হাতে রয়েছে। তাই এখুনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারছেন না বলে প্রতিবেদকে জানিয়েছেন।
Leave a Reply