November 23, 2024, 8:23 am

পদ্মার ঢেউয়ে পর্যটকরা এখন দক্ষিণমুখী

পদ্মার ঢেউয়ে পর্যটকরা এখন দক্ষিণমুখী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পর্যটকরা এখন দক্ষিণমুখী হচ্ছেন। আছড়ে পড়ছে পদ্মার ঢেউ কুয়াকাটা সৈকতে। ঢাকা থেকে ফেরিবিহীন ভ্রমণ এবং সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় সাগরপাড়ে পৌঁছার আনন্দে কুয়াকাটাকে নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে পর্যটকদের। নড়েচড়ে বসছেন পর্যটন খাতের বিনিয়োগকারীরাও।

দেশের নামি দামি ব্যবসায়ীরা এর আগে কুয়াকাটায় কেবল জমিতে বিনিয়োগ করলেও এখন ঝুঁকছেন পর্যটনবান্ধব বিনিয়োগে। সরকারের গৃহীত মাস্টার প্ল্যানের কথা মাথায় রেখেই অনেকে বিনোদন পার্ক, পাঁচতারকা মানের হোটেল নির্মাণে এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে কুয়াকাটায় ছোট বড় এবং সরকারি বেসরকারি দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেল ও বাংলোতে সর্ব্বোচ্চ ১০ হাজার লোকের থাকার সক্ষমতা রয়েছে।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহআলম হাওলাদার জানান, ঢাকা থেকে ফেরিবিহীন কুয়াকাটায় পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উন্নত হোটেল নির্মাণের পাশাপাশি আমাদের কমিউনিটি ট্যুরিজম ডেভেলপ করতে হবে। খাবার হোটেলগুলোর সক্ষমতা নিয়েও একই প্রশ্ন। কুয়াকাটা রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কলিম মাহমুদ জানান, তাদের সংগঠনের ভেতরে ২০টি খাবার হোটেল রয়েছে।

এর বাইরে ছোটবড় মিলিয়ে ৩০টি রেস্টুরেন্ট। আগত পর্যটকদের বিনোদনে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে কোনো পার্ক বা আকর্ষণীয় দৃশ্যমান কোনো আয়োজন এখনো নেই। তৈরি হয়নি অভিজাত শ্রেণির দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য পাঁচতারকা মানের হোটেল। পর্যটন করপোরেশনের নির্মিত পর্যটন হলিডে হোমস কাগজকলমে পরিত্যক্ত ঘোষণার অপেক্ষায়। এর পাশে নির্মিত যুব পান্থনিবাসের আসবাবপত্র দেয়ালের অবস্থা তথৈবচ।

এ ছাড়া কুয়াকাটার মাত্র দুটি আবাসিক হোটেল যথাক্রমে সিকদার রিসোর্ট ও কুয়াকাটা গ্রান্ড অভিজাত শ্রেণির পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হলেও পাঁচতারকা হোটেল না পাওয়ায় সেখানেও পর্যটকদের খেদোক্তি রয়েছে। সড়ক পথের আরামপ্রিয় যাত্রীদের জন্য কুয়াকাটায় ইতোমধ্যে এসি বিলাসবহুল বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এ সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কপথে কোনো বিড়ম্বনা না থাকা এবং কম সময়ে সাগরপাড়ে পৌঁছাতে পারায় পর্যটকদের একটি বড় অংশের দৃষ্টি এখন দক্ষিণমুখী।

এসব পর্যটককে নিয়ে যেসব পরিবহণ কুয়াকাটায় প্রবেশ করছে তারা পার্কিং সংকটে পড়ছেন। কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণাধীন থাকায় মহাসড়কেই দীর্ঘ সারিতে পার্কিং করতে হচ্ছে এসব যানবাহন। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে কেমন সময় লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে কুয়াকাটা পৌরমেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, নির্মাণ সম্পন্ন করতে একটু সময় লাগলেও চলতি বছরেই নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে পার্কিং ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আগত পর্যটকদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালে কাগজকলমে তিনজন চিকিৎসক থাকলেও রোটেশন পদ্ধতিতে একজন দিয়ে চলছে বহির্বিভাগের চিকিৎসা।

২০ শয্যার একটিও চালু নেই। এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. কবির হাসান বলেন, ২০ শয্যা হাসপাতাল হিসাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকলেও জরুরি চিকিৎসায় দুজন ডাক্তার রয়েছেন। বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালে লোকবলসহ আধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সংযোজনে আমরা কাজ করছি। কুয়াকাটায় বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এফবিসিআই পরিচালক ও সেঞ্চুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান এমজিআর নাসির বলেন, কুয়াকাটায় অনেক দিন আগে জমি ক্রয় করলেও বড় রকমের বিনিয়োগে সাহস পাইনি।

এবার ফাইভ স্টার এবং থ্রি স্টার মানের দুটি হোটেল নির্মাণে হাত দিয়েছি। যেখানে হাজার কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ হবে। একই অভিব্যক্তি পাওয়া গেছে দেশের খ্যাতনামা পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী অন্তত ১০ জন বড় ব্যবসায়ীর। তারা কুয়াকাটায় মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে ধীরগতি সম্পর্কে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, মাস্টার প্ল্যান কার্যকরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ ছাড়া সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন নিয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com