November 24, 2024, 5:15 am
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় নির্বাচনের আগে আজ শনিবার থেকে সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় একই সময়ে অবৈধ মাদক উদ্ধারের কথাও বলা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে এ তথ্য মিলেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, দেশের ভেতরে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকা দিয়ে যাতে অস্ত্র ও মাদক ঢুকতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত জেলাগুলোয় বিশেষ নজরদারি রয়েছে।
অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে সীমান্তে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের আগে নানা সহিংসতা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও ভীতি ছড়াতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে দেশে ঢোকে অস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনগুলোর আগে এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হয়। তা ছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা যেন অবাধ ও নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বেআইনি অস্ত্র জব্দ ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ বছরজুড়েই অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে কাজ করে থাকে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। এ ধরনের অভিযান সব সময়ই চলমান থাকে। পুলিশের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে সন্ত্রাসীদের তালিকা করে সে অনুযায়ী গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনাও রয়েছে। ইসির পরিপত্র-৯-এ এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে এ ধরনের পরিপত্র তারা দেখলেও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এ ধরনের কোনো চিঠি আসেনি। এরপরও পুলিশ কিন্তু বসে নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখাতে হয় পুলিশকে, তা ঠিক রাখতে নানা কার্যক্রম চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের জন্য জেলা পুলিশ সুপারদের কাছে সম্প্রতি চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। ওই চিঠি সারা দেশে ওসিদের কাছেও পাঠানো হয়। সব সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও চিঠি ইস্যুর পর তা আজ থেকে জোরদার করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর পুলিশ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ১৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর আগের বছর ২ হাজার ৩১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। চলতি বছরও এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিজিবি সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৩৪টি পিস্তলসহ ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। এর আগের বছর বিজিবির হাতে উদ্ধার হয় তিন হাজারের বেশি অস্ত্র।
৯ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ হয়ে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসার সময়ে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। এর আগে গত ৭ অক্টোবর রাজশাহীতে র্যাব জব্দ করে ৭টি বিদেশি পিস্তল-রিভলবারের বড় চালান। সীমান্ত থেকে এসব অস্ত্র ও গুলির চালান এনেছিল সন্ত্রাসীরা।
অবৈধ অস্ত্র ঠেকাতে সীমান্তের ২০ পথে নজরদারি: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ভেতরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চললেও সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে চোরাচালানিরা নানা কৌশলে দেশে অস্ত্র ঢোকাচ্ছে। বিজিবি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই অবৈধ অস্ত্রের চালান ঠেকাতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে।
গত ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র যাতে আমাদের দেশে না আসতে পারে, সেজন্য আমরা কিন্তু সব সময়ে কাজ করি, এটা আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। তারপরও আমরা এই বছর ইলেকশনকে সামনে রেখে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। যাতে আমাদের দেশে কোনো অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক না আসতে পারে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অন্তত ২০টি পথে অবৈধ অস্ত্র আসে। এগুলোর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া, দেশের উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের রহনপুর, সোনা মসজিদ, আজমতপুর, বিলভাতিয়া, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, ঝিনাইদহের মহেশপুরের জুলুলী, সাতক্ষীরার শাঁকারা ও কলারোয়ার তলুইগাছা, যশোরের বেনাপোল, চৌগাছা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, মেহেরপুর, কুমিল্লা এবং কুষ্টিয়ার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান হয় বেশি।
গত ৫ ডিসেম্বর বিজিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অপারেশন্স ও গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। অবৈধ যে কোনো চোরাচালান ঠেকানোর পাশাপাশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকের চোরাচালান ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছেন তারা।
Leave a Reply